পৃথিবীর সবচাইতে পপুলার মোবাইল ব্র্যান্ড এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় সবচাইতে বড় টেক কোম্পানি! তবে যদি এর রেভিনিউ এর দিক থেকে দেখতে হয় তবে পৃথিবীর ১২ নম্বর সবচাইতে বড় কোম্পানির samsung!
যারা সাউথ কুরিয়ার সিওল শহরে নিজেদের হেডকোয়ার্টার হিসেবে একটা শহর ই বানিয়ে রেখেছে, যা ভাটিকাল শহরে থেকেও তিন গুন বড় আশা করি আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আজকে আমরা স্যামসাং এর হেডকোয়ার্টার সম্পর্কে জানব, তার সঙ্গে সঙ্গে এটিও জানব যে ওর ভিতরে কি কি আশ্চর্যজনক জিনিস আছে।
সাউথ কোরিয়ার সিওল শহরে samsung এর হেড কোয়ার্টার ৩ ভাগে বিভক্ত মোবাইল ফোনের বিজনেস এদের বড় বড় বিজনেস গুলোর মধ্যে একটা পার্ট।
এটা ছাড়াও samsung তৈরি করে!...
- samsung shipping এমনকি কন্ট্রাকশনের কাজও করে থাকে।
- Samsung - টিভি তৈরি করে।
- Samsung - ওয়াশিং মেশিন তৈরি করে।
- Samsung - রেফ্রিজারেটর তৈরি করে।
- Samsung - এসি তৈরি করে।
- Samsung - Flex wash washing machine তৈরি করে।
- Samsung - ডোর লক ও বানায়।
এগুলো ছাড়াও এরকম হাজার ও প্রোডাক্ট আছে যেগুলো স্যামসাং তৈরি করে! তবে এছাড়াও স্যামসাং এর আরো একটা বড় বিজনেস টু বিজনেস ইউনিট আছে। মানে এরকম অনেক কোম্পানি আছে যারা স্যামসাংয়ের প্রোডাক্টের ওপর ভরসা করেই নিজেদের প্রোডাক্ট বানায়।
যেমন আপনি অনেক কোম্পানির ফোনেতেই অ্যামোলেড স্ক্রিন দেখতে পারেন, আর এই অ্যামলেট স্ক্রিন আসলে স্যামসাংই প্রথম তৈরি করেছিল।
সারা পৃথিবী জুড়ে স্যামসাংয়ের প্রায়- তিন লক্ষ বিশ হাজার Employee আছে যাদের মধ্যে ৭০% সাউথ কোরিয়ার বাইরেই অপারেট করে।
- সিওল শহরে শুধুমাত্র samsung এর এমপ্লয়ীদের জন্য আলাদা একটা বাস-স্ট্যান্ড ও আছে!
তো চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক Samsung digital City এর ব্যাপারে।
Samsung Digital City প্রায় ৩৪৬ একর জমিতে ছড়িয়ে আছে।
আরো আছে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স এর বেস-মানে স্যামসাংয়ের যে সমস্ত ইলেকট্রনিক্স আমরা রেগুলার লাইফে ব্যবহার করে থাকি। যেমন-
- স্মার্ট ফোন
- ল্যাপটপ
- মাইক্রোওয়েভ
- টেলিভিশন
- ইত্যাদি
এই স্যামসাং ডিজিটাল সিটিতে একটা ডেডিকেটেড জায়গা আছে যেখানে স্যামসাং তাদের ফাইভ-জি টেকনোলজিকে টেস্টিং করছে।
স্যামসাং বিভিন্ন নেটওয়ার্ক কোম্পানির সাথে ফাইভ-জির ডিল সাইন করে রেখেছে! আর সাউথ কোরিয়াতেও বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানিগুলো স্যামসাং এর সাথেই 5g ডিল সাইন করেছে।
তবে স্যামসাং ক্যাম্পাসে গেলে আপনি একটা জিনিস খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন আর সেটা হল সিকিউরিটি!
স্যামসাং অফিসে সিকিউরিটি খুবই টাইট - কোন অফিসে ঢোকা কিংবা বের হওয়ার সময় প্রত্যেককে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করা হয়! আর এর কারণ হলো যেন কোম্পানির কোন প্রপার্টি বা সিক্রেট কোম্পানি থেকে বাইরে বেরিয়ে না যেতে পারে।
তো এবার চলুন আমরা জেনে নিই স্যামসাং এর সি ল্যাব অর্থাৎ ক্রিয়েটিভ ল্যাব সম্পর্কে।
এটা স্যামসাং এর ইন হাউজ ইনকুবেসন প্রোগ্রাম যেখানে- স্যামসাংয়ের কর্মীরাই নিজেদের আইডিয়াকে Development করতে পারে।
আর এই জন্য তাদের ডে জবের কথা চিন্তা করতে হয় না- মানে আপনি যে ডিপার্টমেন্টেই কাজ করেন না কেন আপনার কাছে যদি কোন এক্সাইটিং আইডিয়া থাকে, তবে আপনি সেই আইডিয়াকে samsung এর সি ল্যাবে develop করতে পারেন।
আর বিভিন্ন ধরনের এক্সাইটিং এবং ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট এই samsung এর সি-ল্যাব থেকেই কিন্তু বেরিয়েছে।
এক্সাম্পল-
- অন ডিম্যান্ড থ্রিডি প্রিন্টার।
- স্মার্ট বেল্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
যে সমস্ত আইডিয়াগুলো সাকসেসফুল হয়, সেগুলোকে হয়তো স্যামসাং নিজেই কিনে নেয় কিংবা একটা নতুন স্টার্টআপ করার জন্য তাদের আলাদা করে ফান্ডিং করে দেয়।
প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসের নিজের আলাদা একটা জিম ফেসিলিটি আছে!...
এই জিম-গুলোর মধ্যে একটি রানিং পাত আছে যেটা পুরো জিমের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে! এই রানিং পাত গুলোর মধ্যে একটা স্লো এবং একটা ফাস্ট পাত আছে।
তবে একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো যদি জিম করার জন্য বাড়ি থেকে কোনো কস্টিউম না এনে থাকেন তাতেও আপনার কোন চিন্তা নেই! আর এর কারণ হলো আপনি এখানেই জিম করার ড্রেস ও পেয়ে যাবেন।
আরো একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এখানকার লাঞ্চ এরিয়া!...
কারণ এখানে আপনি কোন ক্যাশ কাউন্টার খুঁজে পাবেন না, কারণ এখানকার কর্মীদের জন্য লাঞ্চ একদম ফ্রি।
এখানে আপনি-বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন দেশের খাবার পেয়ে যাবেন-খাবার নেওয়ার জন্য দু'ধরনের ট্রে আছে ১। ব্রাউন ট্রে, ২। গ্রীন ট্রে
যদি আপনি ব্রাউন ট্রে নিয়ে খাবার নিতে যান- তার মানে যে খাবার দিচ্ছে সে বুঝে নিবে আপনি বেশি খাবার নিবেন।
আর যদি আপনি গ্রীন ট্রে নিয়ে যান তাহলে সে বুঝে নিবে আপনি কম খাবার নিবেন।
এখানে প্রত্যেকটা কলমে abcd করে লেটার লেখা আছে- যাতে করে এই বিশাল বড় লাঞ্চ এরিয়াতে নিজের বন্ধুদের খুঁজে পেতে অসুবিধা না হয়।
এর মানে একটা জিনিস তো ক্লিয়ার এখানে প্রত্যেকটা কাজের জন্য আমাদের ফোনের মধ্যে কোন অ্যাপের প্রয়োজন হয় না।
যাদের বসে খাওয়ার মত সময় থাকে না তাদের জন্য পার্সেল এর ব্যবস্থাও আছে।
এই ক্যাম্পাসে আরও একটি ইন্টারেস্টিং জায়গা আছে আর সেটি হলো- Samsung Innovation Museum
আর এই মিউজিয়াম সাধারন পাবলিকের জন্য খোলা থাকে- এখানে আপনি স্যামসাংয়ের প্রোডাক্ট গুলোর এভুলেশন দেখতে পারবেন! মানে প্রথম থেকে স্যামসাং প্রোডাক্ট কেমন ছিল এবং ধীরে ধীরে সেটি কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে।
এখান থেকে আপনি samsung এর টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্টের ইতিহাস কেউ বুঝতে পারবেন।
তো এবার আমরা যে ক্যাম্পাস নিয়ে কথা বলবো সেটির নাম হল- Samsung nano City
এখানে samsung এর সেমী কন্ট্রাক্টার এর উপর কাজ হয় ,শুধু এখানেই প্রায় ৪০ হাজার employee কাজ করে এবং ১২ টা ক্যাফে এরিয়া আছে।
এখানে সেই সমস্ত সেমি কন্ট্রাক্টার চিপ তৈরি হয় যেগুলো আমরা স্যামসাংয়ের বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর মধ্যে দেখে থাকি।
রেভিনিউর দিক থেকে দেখতে গেলে ২০২০ সালে samsung পৃথিবীর সবচাইতে বড় চিপ মেকার এর উপাধি পেয়েছিল।
এরকম মনে করা হয় যে যদি Apple একটা iPhone কে হাজার ডলারে বিক্রি করে, তবে তার মধ্যে Samsung এর যে চিপ লাগানো থাকে, তার থেকে Samsung প্রায় ১০০ ডলার কামিয়ে নিয়ে থাকে।
তবে এই এলাকাটা খুবই সিক্রেটিভ এবং বিনা পারমিশনে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয় না।
এখন আমরা যে ক্যাম্পাস নিয়ে কথা বলবো সেটির নাম হল- Samsung R & D
samsung ন্যানো সিটি থেকে গাড়ি চালিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট এর দূরত্বে এই ক্যাম্পাসটি আছে। এখানে মূলত samsung এর বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর ডিজাইন ওয়ার্ক গুলো হয়ে থাকে।
samsung বলে তাদের গ্লোবালি যত এমপ্লয়ি কাজ করে-তাদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ শুধুমাত্র রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টর উপরে কাজ করে, তারমানে প্রায় ৬৫ হাজার কর্মী।
ক্রিটিভিটিকে ইনকারেজ করার জন্য এখানে একটা খুব সুন্দর লাইব্রেরি আছে! যেখানে ডিজাইনাররা বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে নিজেদের রিলাক্স করতে পারে, এবং নতুন আইডিয়ার জন্য ইনস্প্রেশন ও নিতে পারে।
এবার আমরা সরাসরি চলে যাব- স্যামসাংয়ের সাউন্ড ল্যাব এ
এখানে সবকিছুই আছে মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট থেকে শুরু করে ভয়েস রেকর্ডিং এর স্টুডিও পর্যন্ত।
- 1. Press And Hold The Bixby Button On The Side Until You Finish Your Command
- 2. Simply Say "Hi Bixby"
এখানে মূলত তারা স্যামসাংয়ের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট Bixby এর সমস্ত ভয়েস রেকর্ড করে! আমরা স্যামসাংয়ের যে সমস্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করি তার মধ্যে যে সমস্ত ইন বিল্ট সাউন্ড আমরা শুনে থাকি সেই সবকিছুই এখান থেকেই তৈরি।
- যেমন - ক্রেডিট কার্ড সো-আপ করার সাউন্ড
- এসসির সাউন্ড।
- ফ্রিজের সাউন্ড।
- ফোন চার্জে ঢুকালে যে শব্দ হয় এবং চার্জ থেকে বের করলে যে শব্দ হয়।
এই প্রত্যেকটি সাউন্ড ই স্যামসাং সাউন্ড ল্যাব এ তৈরি করে।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স তাদের কর্মীদের যথেষ্ট খেয়াল রাখে এবং এর জন্য তারা অনেক ধরনের ফ্রি সোশ্যাল সার্ভিস প্রোভাইড করে!..
এর মধ্যে * হেলথ কেয়ার এবং * চাইল্ড কেয়ার ও আছে।
যদি আপনার স্যামসাং ডিজিটাল সিটিতে থাকাকালী ডাক্তার দেখানোর দরকার হয়ে যায় তবে সেটি স্যামসাং কর্মীদের জন্য সম্পূর্ণটাই ফ্রি।
স্যামসাং ডিজিটাল সিটিতে যেসব খেলার মাঠ আছে!...
- ১০ টি বাস্কেটবল 🏀 কোর্ট আছে।
- ৪ টি ব্যাডমিন্টন 🏸 কোর্ট আছে।
- ৩ টি ফুটবল ⚽ ফিল্ড ও আছে।
- আছে অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুল, যেগুলো কর্মীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে।
আরো যেসব সুবিধা আছে স্যামসাং ডিজিটাল সিটিতে!...
- কিন্ডার গার্ডেন এ ৫০ জন টি-স্যার প্রায় ৯০০ জন বাচ্চার দেখাশোনা করে যাদের বাবা-মা স্যামসাংয়ের কর্মী।
- এই ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি হেলিপ্যাড ও আছে এবং এমপ্লয়ীদের জন্য আছে ফ্রি বাস এবং ট্রেনের সার্ভিসেস।
- এমনকি যখন বৃষ্টি হয় তখন প্রায় ৯ হাজার ছাতা তাদের এমপ্লয়ীদের এর ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয় একটা বিল্ডিং থেকে আর একটা বিল্ডিং এ যাওয়ার জন্য।
তো বন্ধুরা আপনারাও কি স্যামসাং ডিজিটাল সিটিতে চাকরি করতে চান? নিচে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন যে আপনারা স্যামসাং সম্পর্কে কি মনে করেন।
যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে অন্য বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে একদম ভুলবেন না, আর যারা অলরেডি শেয়ার করে দিয়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ