এক যুবক তার নিজের ঘটনা বলছিল, এবং সে অতীত ও বর্তমানের ভিতর পার্থক্য খুঁজছিল। সে বলল আমি নামাজ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। মহান আল্লাহর নাম কখনো মুখে নিতাম না। পবিত্র কুরআন পড়তাম না।
আমি দিন থেকে একেবারে দূরে ছিলাম। আমার অবস্থা আর ১০ জন যুবকের মতই ছিল। রেস্টুরেন্ট, শপিংমলে আড্ডা দেওয়া পার্টিতে যাওয়া ঘুরে বেড়ানো গল্প গুজব করা ইন্টারনেটে ডুবে থাকা সিনেমা দেখা এসবই ছিল আমার প্রতিদিনের রুটিন।
এবং অন্যান্য যুবকদের মত আমিও অবস্থান সম্পর্কে খুবই খুশি ছিলাম। আমি আমার পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকতাম এবং তারা আমার তেমন কোনো খোঁজ-খবর নিত না। এক রাতে আমি অনেক গুনা করে খুশি মনে বাড়ি ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে ঘুমোতে গেলাম, কিন্তু ঘুম আসছিল না! বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে থাকলাম, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না। ভাবলাম একটা গান শুনি, তাহলে হয়তো ঘুম আসবে, কিন্তু না পারলাম না।
এবার ভাবলাম মুভি দেখি! তাহলে হয়তো ঘুম আসবে, কিন্তু এবার ঘুমাতে পারলাম না। শেষমেষ স্টোরি শুনতে শুনতে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম, তাতেও কোনো কাজ হলো না। এভাবে সকাল হয়ে গেল কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না।
আমি খুব ঘেমে গেলাম! আমার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেল। দুশ্চিন্তায় বিশাল মুছড়ে পরলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে কিচেনে গেলাম, ছুরিটা হাতে নিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইলাম। কিন্তু তখন নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমি আত্মহত্যা করছি কেনো?
কেন নিজেকে ধোকা দিচ্ছি? আমি যা করছি সবই তো হাস্যকর! আমার গুনাহ আমাকে ধোকা দিচ্ছে। আমার অপরাধবোধ আমাকে প্রতারিত করছে। বাস্তবে আমি তো সুখী নয়! আমি কি নিজেকে শেষ করে দেবো? আমি কি আত্মহত্যা করে ফেলব? এভাবে কয়েকবার নিজে নিজেকেই কথাগুলো বললাম।
খোলা জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছিল। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে, ভোরের শুভ্র আলোয় আলোকিত হয়ে আছে আকাশ। শান্ত স্নিগ্ধ সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার নিজের ফেলে আসা অতীতের কথা ভাবতে লাগলাম।
নিজেদের প্রশ্ন করলাম আমি কি সব করছি, এতদিন ধরে এসব কি করছি আমি? আর তখনই শুনতে পেলাম দূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসছে!!
মূলত এটি ছিল কাছের কোন মসজিদ থেকে ভেসে আসা কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ। ইমাম সাহেব ফজরের নামাজে কুরআন কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন, সেখান থেকেই ভেসে আসছিল এই আওয়াজ।
মনে হলো আমি জীবনে এই প্রথমবার কুরআন তেলাওয়াত শুনছি। সবার ঘরে কোরআন থাকে কিন্তু আমার ঘরে নেই। তাই আমার কখনো কোরআন পড়া হয়নি। আমি বুঝি জীবনে এই প্রথম বার কোরআন তেলাওয়াত শুনছি।
*'আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার নফস্ তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় সে সম্পর্কে আমি অবগত। আমি তার কন্ঠ শিবার চেয়েও নিকটে অবস্থান করি। তার ডান কাঁদে ও বাম কাঁদে দুজন ফেরেশতা বসে সব কিছু লিপিবদ্ধ করছে। মানুষ যা ই বলে না কেন, সেটা লক্ষ্য বাধার জন্য সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।' (সূরা ক্কাফ ৫০: ১৬-১৮)
আমি তেলাওয়াত শুনতে লাগলাম আর আমার অন্তরের অবস্থা আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে লাগলো। আমার অন্তরে কুরআন এর নূর প্রবেশ করতে লাগলো। আমার অন্তর কাঁপতে লাগলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে চুপচাপ কোরআন তেলাওয়াত শুনতে লাগলাম। আমার মনে হচ্ছিল কুরআন যেন কেবল আমাকেই সুসংবাদ দিয়ে এসব কথা বলছে।
*'অবশ্যই মৃত্যু যন্ত্রণা আসবে। অথচ এটা থেকেই তোমরা অব্যাহতি চেয়েছিলে। এবং সিংগাই ফুঁক দেওয়া হবে, আর সেটাই হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।' (সূরা ক্কাফ ৫০: ১৯-২০)
*'সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই উপস্থিত হবে। তার সাথে থাকবে তার চালক ও তার কর্মের সাক্ষী। তুমি এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার সামনে থেকে পর্দা উন্মুক্ত করেছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি অত্যন্ত প্রখর।' (সুরা ক্কাফ ৫০: ২১-২২)
আমি কাঁদতে লাগলাম, কাঁদতেই থাকলাম। আমি জানিনা, কেন আমি কাঁদছি। আমার শুধু মনে হচ্ছিল আজই আমি প্রথম কোরআন তেলাওয়াত শুনলাম। আমি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলাম। চোখের পানি যেন আমার গুনাহ গুলোকে ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
পরক্ষণই আমি দিন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠলাম। আমি কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গিয়ে ছিলাম। ফলে আমি ওযু গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। আর মনে মনে ভাবলাম কতদিন পর আজ আমি নামাজ পড়ছি। আমি সেজদায় পড়ে কাঁদতে লাগলাম। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকলাম, তিনি যেন আমার গোনাহসমূহ মাফ করে দেন।
আর তখন থেকেই স্থির করলাম- দ্বীনের উপর অটল থাকবো, আল্লাহর দিকে ফিরে আসবো, ইনশাআল্লাহ!
তাই আমি সব সময় আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি- হে আমার প্রভু! আমার পক্ষ থেকে যা কিছু হয়েছে, তার সবই আমি স্বীকার করছি। এর কারণে আমাকে আর শাস্তি দিও না। গুনাহ মুক্ত আর পবিত্র থাকতে গিয়ে আমি বারবার পদস্থলিত হয়েছি। আপনিই আমার উপর অনুগ্রহকারী ও ইহসানকারি।
আমি আমার গুনাহের কথা স্মরণ করে লজ্জিত হই, অনুতপ্ত হই এবং তওবা করি। আর আপনার উপর আশা রাখি, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনার প্রতি এমন সুধারনা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
এভাবেই আমি দিনের ওপর অটল থেকে আমল করতে লাগলাম। তওবার পথ অনুসরণ করে চলতে লাগলাম। যেন প্রকৃত সৌভাগ্যের জীবন যাপন করতে পারি। ফলে আমার অন্তরে এমন প্রশান্তি অনুভব করতে লাগলাম, যা আল্লাহর অনুগত্য করা ছাড়া, আল্লাহর দাসত্ব করা ছাড়া,
অবশ্যই তোমরাও তেমনি প্রশান্তি অনুভব করবে যেমনটি আমি করেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে তার পথে ফিরে আসবার, তার প্রতি অটল-অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন, আমীন!
_আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আমি ঈশান চৌধুরী_আবার দেখা হবে নতুন কোন পরবর্তী এপিসোডে ইনশাআল্লাহ! ততক্ষণ ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আসসালামুয়ালাইকুম ! আল্লাহ হাফেজ !
2 মন্তব্যসমূহ
Nice post keep going 😊
উত্তরমুছুনThanks 💖🌺
উত্তরমুছুন